দেখতে দেখতে আজ ২২ বছর হয়ে গেল তিনি নেই। তার না থাকার শূন্যতা আজও পূরণ করতে পারেনি ঢালিউড-



একটা সময় ছিল যখন হিট সিনেমার জন্য নির্মাতারা বলতেন- গল্প, রোমান্স, অ্যাকশন, সাসপেন্স লাগবে আর লাগবে দিলদার। সে সময়টায় এতটাই অপরিহার্য ছিলেন তিনি। জনপ্রিয়তাও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন অনেক নায়ক-নায়িকাকে। ‘আব্দুল্লাহ’ সিনেমায় নায়ক হয়েও সাফল্য পেয়ে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। দেখতে দেখতে আজ ২২ বছর হয়ে গেল তিনি নেই। তার না থাকার শূন্যতা আজও পূরণ করতে পারেনি ঢালিউড।


২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন দিলদার। পরে তাকে ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত সারুলিয়া এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুর ২২ বছর পার হলেও দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমার একটি গর্বিত অধ্যায়ে রয়ে গেছেন দিলদার।


তার পুরো নাম দিলদার হোসেন। তবে সিনেমায় তিনি শুধু দিলদার নামেই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ‘কেন এমন হয়’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়ের পা রাখেন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দিনে দিনে তিনি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন বাংলা চলচ্চিত্রে।


একটা সময় ছিল যখন হিট সিনেমার জন্য নির্মাতারা বলতেন- গল্প, রোমান্স, অ্যাকশন, সাসপেন্স লাগবে আর লাগবে দিলদার


দিলদারের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, তাকে নায়ক করেই নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র। তোজাম্মেল হক বকুলের কাছ থেকে ছবিতে নায়ক হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে অবাক হয়েছিলেন দিলদার। বলেছিলেন, ‘আপনি কি আমার পেটে লাথি দিতে আসছেন?’ অনেক অনুরোধের পর রাজি হন তিনি। তবে তার বিপরীতে কে হবেন নায়িকা? এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল জটিলতা। প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মৌসুমী, শাবনূরসহ বেশ কয়েকজন নায়িকা। এরপর নূতনের কাছে প্রস্তাব গেলে সম্মতি জানান তিনি। এরপর থেকে নূতনের কাছে অনেক ফোন আসতে শুরু করে, তিনি যেন সিনেমাটি না করেন! কিন্তু দমে যাননি নূতন। সিনেমাটি তৈরির পরেও নির্মাতা ও প্রযোজক ছিলেন ভয়ের মধ্যে। কেন দিলদারকে নিয়ে এই ঝুঁকি নিয়েছেন, হলমালিকদের কাছ থেকেও শুনতে হয়েছে এমন প্রশ্ন। তবে মুক্তির পর বদলে যায় দৃশ্যপট। প্রথম দিন থেকে হলে ভিড় জমায় দর্শক। প্রথম এবং শেষবারের মতো কোনো সিনেমায় নায়ক হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন ‘কমেডি কিং’ দিলদার।


প্রযোজক জানান, সে সময় আব্দুল্লাহ প্রায় ৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। শুধু দিলদারকে দেখতেই হলে ছুটে এসেছিলেন দর্শক।


দিলদার পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলী জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘গাড়িয়াল ভাই’, ‘অচিন দেশের রাজকুমার’, ‘প্রেম যমুনা’, ‘বাঁশিওয়ালা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।


মৃত্যুর বছরেই দিলদার সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘তুমি শুধু আমার’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।


ব্যক্তিজীবনে দিলদারের স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের নাম মাসুমা আক্তার। পেশায় তিনি দাঁতের ডাক্তার। দিলদারের ছোট মেয়ের নাম জিনিয়া আফরোজ।

Post a Comment

Previous Post Next Post