শিক্ষা অফিসের দারোয়ান কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক



বাগেরহাট মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ক্ষমতাধর এক মনিরুলের উত্থান। শিক্ষা অফিসে ১৯ বছরে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। পদে দারোয়ান হলেও বাগেরহাট শহরে তার ৪ তলা আলিশান বাড়ি, সাড়ে ১০ শতক জমি ও প্রচুর ব্যাংক ব্যালান্স রয়েছে। মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতন পেলেও কলেজ ও ভার্সিটি পড়ুয়া ৩ সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহের পরও খরচ হয় না তার মাসের টাকা। কেমন আলাদ্দীনের চেরাগ পেয়ে হয়ে গেছে যেন কোটিপতি।


বাগেরহাট মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের বর্তমান অফিস সহায়ক পদে উন্নীত মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সানকিভাংগা গ্রামের মো. আব্দুল হামিদ সেখের ছেলে।


২০০৪ সালের ৬ নভেম্বর মাত্র ১৫০০ টাকা বেতনে বাগেরহাট সরকারি বালক বিদ্যালয়ের দারোয়ান পদে চাকরি নেন। ২০০৫ সালের ৮ আগস্ট যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ও পরে একই মাসের ২৪ তারিখ বদলি হয়ে বাগেরহাট সরকারি বালক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এ সময়ে তার বেতন বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৪০০ টাকা। পরে একই বছর নভেম্বর বেতন বৃদ্ধি পেয়ে ২৫০০ ও ২৬০০ টাকা হয়। এই বেতনে এমএলএসএস পদে পরে ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসে বদলি হয়ে যোগদান করেন। সেই যোগদানের পর খুলে তার ভাগ্য। সেই থেকে আদ্যাবদি তিনি বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বনে যান। সকল অফিসার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জিম্মি করে গড়ে তোলেন নিজের ভাগ্য। শহরের পিসি কলেজ রোডে রয়েছে তার ক্রয় করা ১০ শতক জমি, যার উপর গড়ে তোলেন তিনি কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশান ৪ তলা ভবন। এছাড়া শহরের মুনিগঞ্জ, গোটাপাড়া এলাকায় রয়েছে তার আরও ৮৯ শতক জমি। দুটি স্বনামধন্য কোম্পানির ডিলারশিপসহ ব্যাংক ব্যালান্স।


এ ব্যাপারে কথা হলে ভূক্তভোগী বাগেরহাট সদরের কেএম বাদোখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মেফতা উদ্দিন বলেন, 'টাকা না হলে শিক্ষা অফিসের ফাইল নড়ে না। আর এই ফাইল নড়াতে হলে মনিরুলদের কাছে দিতে হয় ধর্না। তাদের হাত ভরলে ফাইল নড়ে।'


তবে উল্লেখিত মনিরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, 'অফিসে চাকরির পাশাপাশি পৈত্রিক ৯ কাঠা জমি রয়েছে তার। সেই জমিতে চাষাবাদ ও কঠোর পরিশ্রম করার কারণে তিনি এ সকল বিত্ত বৈভব গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ভূক্তভোগী শিক্ষককে তার সামনেই নাজেহাল করেন বলে জানান তিনি।'


বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম ছায়েদুর রহমান বলেন, 'অফিসের কর্মচারীরা কে কীভাবে অর্থ বৈভবের মালিক হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে কেউ যদি অভিযোগ করেন, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে মাঝে মাঝে মৌখিক অভিযোগ হলেও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।'

Post a Comment

Previous Post Next Post