গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ২০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিলেন জবি শিক্ষার্থীরা


যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা ‘প্রজেক্ট লাইফলাইন গাজা’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছেন। এর আওতায় শনিবার (৫ জুলাই) গাজার বাস্তুচ্যুত ২০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।  


এই মানবিক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। প্রজেক্ট পরিচালনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ শিক্ষার্থী। তারা হলেন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের নওশীন নাওয়ার জয়া ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের আম্মার বিন আসাদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের জুনায়েদ মাসুদ, ইংরেজি বিভাগের তানজিলা সুলতানা তানি, সিফাত হাসান সাকিব ও উম্মে হাবিবা ও আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের ওমর ফারুক শ্রাবণ।


প্রজেক্ট পরিচালনায় থাকা জবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মার বিন আসাদ বলেন, শুরুতে এটি ছিল ছোট পরিসরের এক প্রচেষ্টা, কিন্তু আমরা এটিকে ভালোবাসা ও মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে গ্রহণ করেছি। গাযার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আমরা চাই, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনের দৃঢ় অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করতে।জা



নওশীন নাওয়ার জয়া নামে আরেক প্রজেক্ট পরিচালনাকারী  শিক্ষার্থী বলেন, চোখের সামনে প্রতিনিয়ত গাজাবাসীর ওপর যে নির্মমতা আমরা দেখছি, তার বিপরীতে মানুষ হিসেবে আমাদের সামান্যতম করণীয় টুকুই আমরা করার চেষ্টা করেছি। তারই প্রয়াসে প্রজেক্ট লাইফলাইন গাজা নামক প্রকল্পটি আমরা গ্রহণ করি। আমরা এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ২,২৬০ ডলার পাঠাতে সক্ষম হই যার মাধ্যমে ২০০ টি পরিবারের জন্য খাবার প্রদান করা হয়। 


তিনি আরও বলেন, গাজার ছোট্ট শিশুদের হাতে সামান্য খাদ্যসামগ্রী পৌছাতে পারা এবং নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম গাজার মাটিতে দেখতে পারা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। ওদের মুখে অকৃত্রিম এই হাসিটুকু ফোটানোর স্বপ্ন পূরণ করতে অংশগ্রহণকারী প্রতিটা মানুষ, যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষাভাবে আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আগামীতেও আমাদের এই মানবিক কার্যক্রম চলমান থাকবে ইনশাআল্লাহ।  


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, এই মানবিক প্রচেষ্টার অংশ হতে পারা আমাদের জন্য এক গভীর দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। মানবিকতা, ন্যায়বোধ এবং বৈশ্বিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আমাদের এই প্রয়াস।


আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক শ্রাবণ বলেন, গাজা এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সংকটপূর্ণ ও মানবিক বিপর্যয়ের স্থান। এ অবস্থায় তাদের জন্য কিছু করা আমাদের কাছে শুধু স্বেচ্ছাসেবা নয়, বরং একটি দায়িত্ব। সেই অনুভব থেকেই আমরা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী, ‘প্রজেক্ট লাইফলাইন গাযা’ শুরু করি। শুরুতে ১০ লক্ষ টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও সীমিত জনবল ও বিভিন্ন জটিলতার কারণে আমরা ৩ লক্ষ টাকা তুলতে সক্ষম হই। তবুও সদস্যদের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে আমরা প্রথম ধাপে গাজার ২০০ পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে পেরেছি। সামনে আমাদের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হচ্ছে, যেখানে আমরা আশা করছি আরও বেশি মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বিশেষভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমিতি, সংগঠনসমূহ ও নেতৃত্বে থাকা সকলের একসঙ্গে পাশে থাকার আহ্বান জানাই।


উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, ‘প্রজেক্ট লাইফলাইন গাজা’ একটি আন্তর্জাতিক ছাত্র-যুব উদ্যোগ, যার লক্ষ্য গাজার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে দাঁড়ানো। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ কার্যক্রম চলবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post