ভারত, বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী। সেই হিসেবে হওয়ার কথা ছিলো পরম আপন। কিন্তু তাদের আচরণে বারবার প্রকাশ পায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ আর দাদাগিরি দেখানোর মন মানসিকতা। ওরা যেনো কিছুতেই মানতে চায়না বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির গোপালগঞ্জ সফরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জাগ্রত হয় ভয়ঙ্কর রূপে, হামলা চালায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর। গোপালগঞ্জের সেই রণক্ষেত্র নিয়ে এবার ভারত করছে দাদাগিরি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সরাসরি ইঙ্গিত দিয়েছেন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের।বাংলাদেশ খাবার ডেলিভারি
সম্প্রতি নয়াদিল্লীতে এক সংবাদ সম্মেলনে টাইমস নাউ-এর এক সাংবাদিক গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ঘিরে সহিংসতার বিষয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, “আমরা এই অঞ্চলের সব ঘটনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করি এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ নেই।”
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভারতের এই দাদাগিরি নতুন কিছু নয়। কিন্তু দাদাবাবুরা বারবার ভুলে যায় তাদের পা চাটা স্বৈরাচার হাসিনা আর বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে বসে নেই। হাসিনা যেভাবে দেশ চালিয়েছিলো ভারতের পোষা বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে, তাতে দেশের সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণে ছিলো ভারতের। হাসিনা ছিলো পুতুল, দিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদির মাস্টার প্লানে চলতো বাংলার হালচাল।
এদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার এলাকা গোপালগঞ্জ ইস্যুতে এভাবে ভারতের হস্তক্ষেপ করতে চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সর্বমহলে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এনসিপির নেতাদের ওপর এই নেক্কারজনক হামলায় ভারতের ষড়যন্ত্র আর হাত রয়েছে বলে ইতিমধ্যে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের একাধিক অডিও বার্তা ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দেখা যায়, দিল্লিতে বসেই গোপালগঞ্জবাসীকে তারা এনসিপির ওপর হামলার নির্দেশ দিচ্ছে।
সবগুলো বিষয় একত্রে করে বিশ্লেষকরা বলছেন গোপালগঞ্জের এই হামলার দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না ভারত। গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র হওয়ার পিছনে রয়েছে প্রতিবেশীদের গভীর ষড়যন্ত্র, এর পিছনে তারা দেখিয়েছেন বেশ কিছু শক্ত যুক্তিও। প্রথমত, গোপালগঞ্জের এই ঘটনার পরপরই ভারতের এভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু হস্তক্ষেপের কথা বলা। প্রতিদিনই যেখানে কোন না কোন রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটে মোটামুটি বিশ্বের সব দেশেই। ভারত আর বাংলাদেশও এর ব্যাক্তিক্রম নয়, কিন্তু এনসিপির এই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জকের রণক্ষেত্র বানানোর ঘটনায় ভারত কেন এতো উদ্বিগ্ন? অন্য কোন দেশের কোন ঘটনা বা বাংলাদেশে অন্য কোন ঘটনা নিয়েই তো তাদের কথা বলতে দেখা যায় না। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছে, গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্রের পিছনে রয়েছে ভারতের প্রত্যক্ষ ইন্ধন।
দ্বিতীয়ত, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার দলের নেতাদের যেখানে ঠাঁই দেয়নি বিশ্বের অন্য কোন দেশ, সেখানে ভারত আশ্রয় দিয়েছে বুক ফুলিয়ে। শুধু আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি দাদারা রীতিমতো হাসিনাকে ফেরানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ওরা। আর এর অংশ হিসেবেই ভারতের সহযোগিতায় দিল্লিতে বসেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা আর সন্ত্রাসী সাদ্দামের অডিও আর ভিডিও বার্তায় এনসিপির ওপর হামলার সরাসরি ঘোষণা আসে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তৃতীয়ত, এগিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচনের সময়, নিষিদ্ধ হয়েছে ভারতের পা চাটা খুনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। সুতরাং সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা পুরোপুরি অসম্ভব। তাই গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের থেকে যাওয়া দোসরদের উস্কে দিয়ে পুরো দেশব্যাপী অরাজকতা আর বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়াই ছিলো ভারতের উদ্দেশ্য। যাতে আবারো বাংলাদেশে এসে হাসিনা অংশ নিতে পারে নির্বাচনে আর ভারতও বাংলাদেশে তাদের অঘোষিত দুঃশাসন পরিচালনা করতে পারে।
চতুর্থত, গোপালগঞ্জের রণক্ষেত্রের ইস্যুকে বিশ্বের সামনে বড় করে দেখিয়ে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। আর বিশ্বব্যাপী দেশ শাসনের ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা। পাশাপাশি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর অবস্থা তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশে দাদাবাবুদের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা।।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব কারণেই মূলত ভারত গোপালগঞ্জ ইস্যুতে দাদাগিরি দেখাতে চাইছে। তবে এখন দিন বদলেছে হাসিনা পালিয়েছে চোরের মত লেজ গুটিয়ে। ক্ষমতায়ও এসেছে পালাবদল। বিশ্ব শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বাধীন সরকার কখনোই বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের দাদাগিরি বরদাস্ত করে না। দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় এক বছরে দেখা গেছে সেই চিত্রই। ভারতের চোখে চোখ রেখে দাদাবাবুদের সমস্ত দম্ভ আর অহংকার চূর্ণ করে অসাধারণ শাসন ব্যবস্থার নজির গড়েছেন এই মাস্টারমাইন্ড।