সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস ঘিরে উচ্চ আদালতের মর্যাদাহানিকর মন্তব্যে আদালত অবমাননার অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পূর্ণাঙ্গ আদেশ পেলে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী আইনজীবী।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার (২০ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ আবেদনকারী আইনজীবী জসিম উদ্দিন শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ফেসবুকে উচ্চ আদালত সম্পর্কে দেওয়া স্ট্যাটাস ‘মর্যাদাহানিকর’ ও ‘অবমাননাকর’ উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমকে গত ২৪ মে আদালত অবমাননার অভিযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন।
নোটিশের পর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এবং কোন জবাব না পেয়ে সারজিস আলমের বিরুদ্ধে গত ২৮ মে আদালত অবমাননার আবেদন করেন আইনজীবী জসিম উদ্দিন। আবেদনের ওপর গত ৭ জুলাই শুনানি শেষে হাইকোর্ট আদেশের জন্য আজ রোববার (২০জুলাই) রাখেন।
আদেশে আদালত বলেছেন, ‘ডিসপোসড অফ।’
আইনজীবী জসিম উদ্দিন আদেশের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট আবেদনটি ডিসপোসড অফ (নিষ্পত্তি) করেছেন। পূর্ণাঙ্গ আদেশ পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানান এই আইনজীবী।
আইনজীবী জসিম উদ্দিনের গত ২৪ মে পাঠানো নোটিশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে সারজিস আলমকে স্ট্যাটাসের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
গত ২২ মে সারজিস আরম এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “টাকা আর রাজনৈতিক দলের সুপারিশে অনেক হত্যাকারী আওয়ামীলীগারের জামিন হয়ে যায়। টাকা আর রাজনৈতিক সুপারিশ নাই বলে আওয়ামী আমলে জুলুমের শিকার অনেক মজলুমের জামিন হয় না।
শাপলা হত্যাকাণ্ডে হেফাজতের উপরে চাপানো মিথ্যা মামলায় অনেক মজলুম আলেম এখনো আদালতে চক্কর কাটে, কারাগারে বন্দী থাকে।
অথচ এমন অনেক দাগী আসামি বিগত কয়েক মাসে জামিন পেয়েছে যারা বিএনপির সাথে সংযুক্ত হলেও বিএনপির সময়ে তাদের কৃতকর্ম ও অপরাধের জন্য জেলে গিয়েছে। এগুলো কিভাবে হয়? কার সুপারিশে হয়? কোন আইনজীবী এবং বিচারকের প্রত্যক্ষ মদদে হয়?
প্রকাশ্য দিবালোকে হাসিনার নির্দেশে এতগুলো মানুষ খুন হলো, এতগুলো মানুষের রক্ত ঝরলো, তারপরও নয় মাসে একটা বিচারকার্য সম্পন্ন হয় না ! একটা খুনের বিচার হয় না!
এই দায় আইন উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ নজরুল স্যার কি কোনো ভাবে এড়াতে পারে? তাহলে কি আমাদের এখন তার পদত্যাগ চাওয়া উচিত নয়?”
সারজিসকে দেওয়া লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে মো.ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মামুনুর রশিদ। শুনানি শেষে হাইকোর্ট সেই রিট সরাসরি খারিজ করে দেন। রায় ঘোষণার পর আপনি (সারজিস) ভেরিফায়েড মেটা (ফেসবুক) আইডিতে ১১টা ৪৯ মিনিটের দিকে একটি প্রতিক্রিয়া দেন। যেটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের এক স্তম্ভ বিচার বিভাগের বিষয়ে অসম্মান দেখিয়েছেন। যেটা মর্যাদাহানিকর ও আদালত অবমাননা।