ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসন মঙ্গলবার পঞ্চম দিনে প্রবেশ করেছে। সময়ের সাথে সাথে ইসরাইলি সরকারের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টর দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এতে মার্কিন কর্মকর্তারা ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন। একটি প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টর পুনঃসরবরাহ প্রচেষ্টার সাথে পরিচিত একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের মজুদ ‘দ্রুত’ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি মার্কিন সরকারের কিছু অংশের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষভাবে যারা আশঙ্কা করছেন যে, ইরানের উপর সরাসরি মার্কিন হামলা হলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিশোধ নিতে পারে ইরান। ফলে মার্কিন বৈশ্বিক ইন্টারসেপ্টরের মজুদ ভয়াবহভাবে হ্রাস পেতে পারে। এই খবর জানিয়েছে প্রেস টিভি।
১৩ জুন থেকে ইরানের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযান ‘ট্রু প্রমিজ থ্রি’ কেবল ইসরাইলি সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের উপরই নয়; দেশটির ক্ষয়িষ্ণু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপরও প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে।
দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক হুমকি ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের যৌথভাবে তৈরি এই অ্যারো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পুনরায় পূরণ করা ব্যয়বহুল বলে মনে করা হয়।
সিরিয়ায় ইরানের কূটনৈতিক মিশনে ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ২০২৪ সালের এপ্রিলে ‘ট্রু প্রমিজ ওয়ান’ এর পর থেকে এই ইন্টারসেপ্টরগুলি পুনঃস্থাপনে ইসরাইলি সরকারের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবেদনে পেন্টাগনের একজন প্রাক্তন জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তা ড্যান ক্যাল্ডওয়েলকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য যে ধরণের ইন্টারসেপ্টর প্রয়োজন হয়, তা ব্যয়বহুল এবং প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা কঠিন।
তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীঘ্রই তাদের মজুদ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিশেষ করে ইয়েমেনি সামরিক বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী ব্যয়ের কারণে।
‘‘আমরা জানি না ইরান আরও কত বেশি মিসাইল উৎক্ষেপণ করতে পারে,’’ বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রাক্তন কর্মকর্তা জশ পল। তিনি গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা যুদ্ধের প্রতি মার্কিন সমর্থনের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন। তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘‘আমি মনে করি এটি ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে লঞ্চারের সমস্যা।’’
ওয়াশিংটন এবং তেহরানের মধ্যে মধ্যস্থতার সাথে জড়িত তিন আরব কর্মকর্তা কাতারি সংবাদ ওয়েবসাইটকে বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, ইরানে ইসরাইলি হামলায় সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। যদিও অনেকেই ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনকে ‘সহ-যুদ্ধরত’’ হিসাবে বর্ণনা করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, মার্কিন নৌবাহিনী পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করার জন্য এসএম-৩ জাহাজ-ভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করেছে। তাদের সরবরাহ অসীম নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইরানকে সরাসরি হুমকি দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সাথে সিচুয়েশন রুমে একটি বৈঠক করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু এবং ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী ইসরাইলি লবি ট্রাম্পকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা তাকে সরাসরি হামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। যদিও তার অনেক উপদেষ্টা তাকে এই ধরনের বেপরোয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করছেন।
এমনকি ট্রাম্প মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের সাম্প্রতিক মূল্যায়নকেও উপেক্ষা করেছেন। সেখানে স্পষ্টভাবে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।
মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’। এটাকে অনেকেই ইরান এবং নেতানিয়াহুর সাথে তার যোগসাজশের প্রতি সরাসরি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখেছেন। সূত্র: মেহর নিউজ