ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এবার নতুন মাত্রা যোগ করলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাষায় ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান জানিয়ে এলেও এবার তিনি সরাসরি হিব্রু ভাষায় হুমকি দিয়েছেন জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) শুক্রবার ভোরে ইরানের অন্তত ৮টি শহরের প্রায় ১০০টি স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী (IAF)। ইরান দাবি করে, এসব হামলার জবাবে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এর মধ্যেই বুধবার (১৮ জুন) খামেনি নিজের হিব্রুভাষী ‘এক্স’ অ্যাকাউন্ট থেকে একটি হুমকিমূলক বার্তা প্রকাশ করেন। উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলি জনগণ ও নেতৃত্বকে সরাসরি সতর্ক করে দেওয়া।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, “সন্ত্রাসী জায়নবাদী যে কোনো স্থাপনার বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই শক্তিপ্রয়োগ করব। জায়নবাদীদের প্রতি কোনোপ্রকার দয়া আমরা প্রদর্শন করব না।” উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বার্তাটি তিনি হিব্রু ভাষায় পোস্ট করেন, যা সরাসরি ইসরায়েলি নাগরিকদের উদ্দেশ্য করে দেওয়া একটি রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বার্তা।
খামেনি এর আগেও তার ফার্সি ও ইংরেজিভাষী অ্যাকাউন্ট থেকে একই হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু হিব্রু ভাষায় হুমকি দেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, কারণ এটি ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আবহে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ অভিযানে ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানীসহ মোট অন্তত ৪৫০ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ইরানে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয় এবং তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা আসে তেহরান থেকে।
জবাবে ইরানের সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নামের একটি পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এখন পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। ইরান দাবি করেছে, তারা শুধুমাত্র সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, যতদিন ইরানের হুমকি থাকবে, ততদিন তাদের প্রতিরক্ষা অভিযান চলবে। তার এই বক্তব্য ইসরায়েলি জনমতকে উজ্জীবিত করলেও আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের এই মুখোমুখি অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা দুই পক্ষকেই সংযম দেখাতে বলেছে, যদিও বাস্তবতার মাটিতে উভয় দেশই নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল