প্রথমবারের মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি সৌরজগতের জন্মপ্রক্রিয়া সরাসরি দেখতে সক্ষম হয়েছেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে ১ হাজার ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ‘HOPS-315’ নামের এক তরুণ নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহ গঠনের সূচনা পর্যায়ে খনিজ কণার জন্ম হতে দেখা গেছে। খবর বিবিসি সায়েন্স ফোকাস
এই আবিষ্কারকে গ্রহ গঠনের সবচেয়ে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, এই ধাপে গ্যাসীয় অবস্থায় থাকা মৌলিক উপাদান সিলিকন মনোক্সাইড (SiO) ধীরে ধীরে স্ফটিকে পরিণত হচ্ছে- যা পরে পাথুরে কণায় রূপ নেবে। এভাবেই তৈরি হবে ভবিষ্যতের গ্রহের ভিত্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষণা সহলেখক মেরেল ফান্ট হফ বলেন, ‘আগে আমরা গ্রহ গঠনের কিছু মধ্যবর্তী ধাপ যেমন ধুলিকণার বৃদ্ধি দেখেছি, কিন্তু এবারই প্রথম একেবারে শুরুর ধাপ দেখতে পেলাম। এটা যেমন, আপনি এতদিন টডলার দেখেছেন, এবার হঠাৎ করে একটা নবজাতককে দেখলেন।’
HOPS-315 একটি নবীন নক্ষত্র, যা সূর্যের প্রাথমিক রূপের সঙ্গে মিলে যায়। এর চারপাশে ঘূর্ণায়মান ‘প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক’ বা গ্যাস ও ধুলোর চাকতি ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন খনিজে রূপ নিচ্ছে। সেখান থেকেই জন্ম নেবে ভবিষ্যতের গ্রহগুলো।
গবেষণায় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) এবং আতাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (এএলএমএ) ব্যবহার করে SiO গ্যাস এবং কঠিন খনিজের অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়।
গবেষণা দলের প্রধান ও নেদারল্যান্ডসের লেইডেন অবজারভেটরির অধ্যাপক মেলিসা ম্যাকক্লুর বলেন, ‘এই প্রথম খনিজ কণাগুলো একত্রিত হয়ে ‘পেবল’ তৈরি করবে, যা পরে কিলোমিটার আকারের গ্রহের ভ্রূণ তৈরি করবে। শেষপর্যন্ত সেগুলো থেকে জন্ম নেবে শিলা গ্রহ এবং বৃহস্পতির মতো গ্যাস গ্রহের কেন্দ্র।’
তবে গ্রহগুলোর পূর্ণ রূপ পেতে বহু সময় লাগবে। অধ্যাপক ফান্ট হফ বলেন, ‘এই চাকতির বিবর্তন ধীরে ধীরে হয়। একে পুরোপুরি পরিবর্তিত হতে লক্ষ লক্ষ বছর লেগে যেতে পারে।’
গবেষক দলটি এখন HOPS-315-এর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে এবং এরকম আরও নবজাত সৌরজগতের খোঁজ করবে।