ভয়ংকর ১৮ জুলাই কেড়ে নিয়েছে বহু মেধাবীর প্রাণ। যারা বেঁচে থাকলে হয়তো আগামীর বাংলাদেশকে পৌঁছে দিতো স্বপ্নের শিখরে। তাদেরই একজন ফারহান ফাইয়াজ। রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া এই মেধাবী সন্তানের পথ চেয়ে আজও বসে থাকেন মা।
একমাত্র ছেলেকে ছুঁয়ে দেখা হয়নি একটি বছর। তাই কবরের কাছে গিয়েই ছেলের উপস্থিতি অনুভবের চেষ্টা করেন শহিদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা।
রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাইয়াজ বেঁচে থাকলে এবার বসত এইচএসসি পরীক্ষায়। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার ধারাবাহিকতায় হয়তো এবারও করত ভালো ফলাফল। কিন্তু পরিবারের সব আশা-আকাঙ্ক্ষার ঊর্ধ্বে উঠে ফাইয়াজ এখন কেবলই স্মৃতি।
শহিদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘এইচএসসির পর ওমরায় যাবে এটা তার ইচ্ছে ছিল। তখন ওর খুব ইচ্ছেও ছিল দুবাই যাওয়ার। কিন্তু আমি তাকে দুবাই নিয়ে যেতে পারিনি। তার এই একটা ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারিনি। এখন এটা মনে হলে খুব কষ্ট লাগে।’
রাজনীতি আর নির্বাচনি ডামাডোলে শত সম্ভাবনাময় তরুণ হত্যার বিচার এখনো দৃশ্যমান নয়। তাই ক্ষোভের শেষ নেই ফাইয়াজের বাবার।
তিনি বলেন, ‘প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল বিচার প্রক্রিয়াটাকে। এখন তো সরকার ব্যস্ত নির্বাচনের প্রস্তুতিতে। আমি হতাশ বিচার আদৌ পাবো কিনা জানি না। তাই জায়নামাজে বসে কাঁদি। হে আল্লাহ, তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। আমার ছেলেসহ যাদের হত্যাক করা হয়েছে তাদের বিচার তুমি করো।’
সন্তান হারানোর এক বছরে মায়ের কাছে জমে আছে অসীম আদর, ভালোবাসা আর না বলা হাজার কথা। এখন শুধু ছবির সঙ্গেই কথা বলে কাটে সময় ফাইয়াজের মা।
শহিদ ফারহান ফাইয়াজের মা ফারহানা দিবা বলেন, ‘আগে প্রায়ই ছবিগুলো বের করে দেখতাম। ছবি আর কাপড়চোপড় দেখলে আরও খারাপ লাগে। ছোটবেলায় দুই ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত কে আম্মুর সঙ্গে ঘুমাবে! ছেলেটা চাইত আমার সঙ্গেই ঘুমাতে।’
ফাইয়াজশূন্য ঘরটি মায়ের কাছে এখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস। ওখান থেকে আর ভেসে আসে না ‘মা’ ডাক। আর ভাইয়ের সঙ্গে খুনসুটি করতে না পারায় মন খারাপে দিন কাটে ছোট বোনের।
শহিদ ফারহান ফাইয়াজের বোন সায়ীমা ইসলাম ফারিন বলেন, ‘ভাইয়া’ বলে ডাকতে গেলেই বুকটা কেঁপে উঠে। এখন আর কাউকে ‘ভাইয়া’ বলতেই ইচ্ছে করে না। খুব খারাপ লাগে।’
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ফাইয়াজ। ফাইয়াজদের আত্মত্যাগ দেশের যে পরিবর্তনের আশায়, তার বাস্তবায়ন কত দূর সে প্রশ্ন স্বজনহারা প্রতিটি পরিবারের।