আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্কোয়াড গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। নির্ভরযোগ্য তথ্য ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে ১২ জন ক্রিকেটারের জায়গা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। তবে বাকি ৩টি স্থানের জন্য চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, যার ফয়সালা হবে আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এ।
ব্যাটিং লাইনআপ: টপ অর্ডারে ৪ জনের লড়াই, তৌহিদ হৃদয় নিশ্চিত
বিশ্বকাপের ব্যাটিং লাইনআপে প্রথম ৫টি পজিশন নিয়ে অনেকটা নির্ভার নির্বাচকরা। টপ অর্ডারে অভিজ্ঞ লিটন কুমার দাসের সাথে থাকছেন তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন এবং সাইফ হাসান। কন্ডিশন এবং প্রতিপক্ষ বিবেচনায় এই চারজনের মধ্যে ব্যাটিং পজিশন অদলবদল হতে পারে। বিশেষ করে পারভেজ হোসেন ইমন ওপেনিং এবং চার নম্বর—উভয় পজিশনেই সফল হওয়ায় দলের পরিকল্পনায় তিনি বড় ভূমিকা রাখছেন।
অন্যদিকে, মিডল অর্ডারে পাঁচ নম্বর পজিশনটি নিজের করে নিয়েছেন তরুণ তুর্কি তৌহিদ হৃদয়। বিপিএলে তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং চাপের মুখে সাবলীল ব্যাটিং তাকে স্কোয়াডে একটি নিশ্চিত জায়গা এনে দিয়েছে।
বোলিং ইউনিট: ৭ স্পেশালিস্টেই ভরসা বাংলাদেশের
বোলিং বিভাগে কোনো বড় চমক ছাড়াই ৭ জন বিশেষজ্ঞ বোলারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন স্পিনার এবং ৪ জন পেসার।
স্পিন বিভাগ: লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেনের ওপর বড় ভরসা রাখছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তার বিগ ব্যাশ খেলার অভিজ্ঞতা দলের জন্য সম্পদ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার সাথে থাকছেন অফ-স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান এবং অভিজ্ঞ নাসুম আহমেদ।
পেস বিভাগ: বাংলাদেশের পেস অ্যাটাক সামলাবেন অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। তাদের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে থাকছেন উদীয়মান তানজিম হাসান সাকিব এবং বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
১৩তম স্থান: ফিনিশার হিসেবে সাইফউদ্দিনের প্রত্যাবর্তন
স্কোয়াডের ১৩তম সদস্য হিসেবে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের পাল্লা সবচেয়ে ভারী। টিম ম্যানেজমেন্ট ৬ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার পরিকল্পনা করলে সাইফউদ্দিন হতে পারেন আদর্শ ফিনিশার। বিশেষ করে ডেথ ওভারে কার্যকরী বোলিং এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দলকে জিতিয়ে তিনি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। পেস বোলিং ব্যাকআপ ও হার্ড হিটিং—এই দুই গুণই তাকে স্কোয়াডে এগিয়ে রাখছে।
শেষ ২ টিকিটের লড়াই: ৪ জনের ভাগ্য এখন বিপিএলের হাতে
স্কোয়াডের ১৪তম এবং ১৫তম সদস্য কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে সবথেকে বেশি জল্পনা। এই দুটি পজিশনের জন্য লড়াই করছেন ৪ জন ব্যাটার:
১. সাব্বির রহমান রুম্মন
২. নুরুল হাসান সোহান
৩. শামিম হোসেন পাটোয়ারী
৪. জাকির আলী অনিক
এই ৪ জনের ভাগ্য এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে বিপিএলের পারফরম্যান্সের ওপর। বিশেষ করে হার্ডহিটার সাব্বির রহমানের জন্য এটি এক সুবর্ণ সুযোগ। বিপিএলে ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে কমপক্ষে ১০ ম্যাচে যদি তিনি ২টি অর্ধশতক এবং ১টি শতক হাঁকাতে পারেন, তবে তৌহিদ হৃদয়ের বিকল্প হিসেবে তার দলে থাকা নিশ্চিত।
অন্যদিকে, সোহান শেষ সিরিজে নিজের নামের বিচার করতে পারেননি এবং জাকির আলীও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। শামিম পাটোয়ারীর জায়গাও এখন অনিশ্চিত। ফলে বিপিএলে যারা ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারবেন, তাদের হাতেই উঠবে বিশ্বকাপের শেষ দুটি টিকিট।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের নজর এখন বিপিএলের মাঠের দিকে, যেখান থেকেই চূড়ান্ত হবে বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড।
সংক্ষেপে ১২ জন নিশ্চিত সদস্যের তালিকা:
লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, সাইফ হাসান, তৌহিদ হৃদয়, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলাম।
সম্ভাব্য ১৩তম সদস্য: মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
